মিলারদের কাছে ধান ও চালের অবৈধ মজুদের তথ্য চেয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সঠিক তথ্য পেলে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার বিকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় ও বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও মিলস মালিকদের এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে চালের জাতীয় মজুদ ২০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। স্বাভাবিক অবস্থায় এই সময়ে এই মজুদ ১০ লাখ মেট্রিকটন থাকে।

মন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দেশে এতো বিপুল চাল মজুদ থাকার পরও চালের দাম বাড়ছে; যা কাঙ্ক্ষিত নয়। দাম বাড়ার কোনো কারণ সামনে নেই। কেন চালের দাম বাড়ছে-আমাদেরও প্রশ্ন। আমরা মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। মাঠ পর্যায়ের তথ্য আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ কাজে লাগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রতিবেদন বলছে কোথাও কোনো বাজারে চালের অভাব নেই, চাল ভর্তি। কিন্তু দাম কেন বাড়ছে- তা খতিয়ে দেখতে হবে। মিলের স্টক ভেরিফিকেশান করতে হবে, কতটুকু ক্রাসিং হলো, কতটুকু সরবরাহ হলো, তা প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত রিপোর্ট করতে হবে।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের মুনাফা কম করে দেশের মানুষের প্রতি মানবিক হতে হবে।
কারা ধান-চাল মজুদ করছে মন্ত্রী নিজেই জানতে চান কর্মকর্তাদের কাছে।

মন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি জেনে থাকেন কারও কাছে অবৈধ ধান চাল মজুদ আছে, তার তথ্য দিন। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন আমাদের। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে চাল আমদানি করা হবে। ১০ শতাংশ শুল্কহারে আমদানি করা হবে। বোরোতে বাম্পার ফলন হয়েছে, আমনেও হয়েছে, তারপরও চালের দাম বাড়ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান তিনি।

এদিকে সভায় মিল মালিকদের পক্ষে নিরদ বরণ সাহা বলেন, বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ছে, পরিবহণ ব্যয়ও বাড়ছে। চার হাত বদল হয়ে চালের দাম বাড়লেও মোকামে চালের দাম খুব বেশি বাড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা চালের দাম বেশি বাড়াচ্ছে। করোনাকালে অনেক অলস অর্থ তৈরি হয়েছে। এসব অর্থ দিয়ে ধান চাল কিনে মজুদ করে রাখা হচ্ছে, বন্ধ অনেক মিলেও চাল কিনে রাখা হচ্ছে। অবৈধ মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নওগাঁর মিল মালিক বেলাল হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত মজুদের কারণে চালের দাম বাড়ছে। ধান-চালের ব্যবসার অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা ধান-চাল নষ্ট করে ফেলে, যা জাতীয় সম্পদেও বিপুল অপচয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জর এরফান গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী এরফান আলী বলেন, গত তিন মাসে মিল গেটে চালের দাম বাড়েনি। আড়তদাররা চালের দাম বাড়ায়, নতুন নতুন ব্যবসায়ী গ্রুপ ধান-চালের ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে। তারাও পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) জিএসএম জাফর উল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, আরএমপির কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জি এম ফারুক পাটোয়ারী ও বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজ্জামান।

এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

 

কলমকথা/সাথী